আমতলী প্রতিনিধি ॥ বরগুনার আমতলী উপজেলার মৎস্যজিবী ও মৎস্য ব্যাবসায়ীদের কথা চিন্তা করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্মিত একমাত্র বরফকলটি সংস্কার আর অব্যবস্থাপনার অভাবে ৪০ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে বরফের অভাবে যেমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় জেলেদের তেমনি বরফকলটির কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। উপজেলা সমবায় অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে উপকূলীয় জেলেদের কথা বিবেচনা করে আমতলী পৌরসভার বাসুগি এলাকায় ২ একর জমি ক্রয় করে ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশে (সিসিডিবি) নামে একটি প্রতিষ্ঠান এ বরফকলটি স্থাপন করে। সংস্থাটির আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বরফকলের জন্য সেসময় একটি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। বরফ উৎপাদনের জন্য বসানো হয় ৬২ অশ্বশক্তির একটি ডিজেল চালিত মোটর ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি। প্রতিদিন ১০ টন বরফ উৎপাদন সম্পন্ন বরফকলটি শুরুতে লাভজনক হলেও স্থাপনের ৭ বছরের মাথায় ১৯৮১ সালে অজ্ঞাত কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যাওয়ার ৪০ বছরেও বরফকলটি আর চালু হয়নি। এরপর আমতলীতে আর কোনো বরফকল স্থাপিত না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয় জেলে ও মৎস্য ব্যাবসায়ীরা। তারা দূর-দূরান্ত থেকে বরফ সংগ্রহ করে মৎস্য প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত করেছেন। এতে খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা তেমন একটা লাভ করতে পারছেন না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বরফ উৎপাদনের জন্য নির্মিত কলটির ৬০০ বর্গফুটের পাকা ভবনটি জীর্নদশায় পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার ফলে ভবনের পলেস্তরা খসে পড়ছে। ভবনের দরজা জানালা পাল্লা চৌকাঠ এবং লোহার গ্রিলগুলো খুলে নেয়া হয়েছে। ভবনের ভেতরে বরফ উৎপাদনের জন্য লোহার অকেজো মরিচা ধরা ৩ থেকে ৫টি ক্যান ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে রয়েছে। ৬২ অশ্বশক্তির ডিজেল চালিত মোটরের যন্ত্রপাতি কিছুই নেই, সব চুরি হয়ে গেছে। ভবনের পাশেই পানি সরবরাহের জন্য খননকৃত পুকুরটি মৃতপ্রায়, পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। বরফকলের ২ একর জমির কোনো হদিস নেই। ভবন বাদে পুরো জায়গা কতিপয় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল করে তাতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়েছে এবং বসবাস করছে। স্থানীয় বাজার মূল্যে এ জমির মূল্যে প্রায় কোটি টাকার ওপরে। স্থানীয়রা ও একাধিক জেলেরা বেদখল হওয়া বরফকলের সম্পত্তি দ্রুত উদ্ধার করে কলটি পুনঃরায় চালু করার জোর দাবি জানায়। মৎস্যজীবী আ. সোবাহান বলেন, বরফের অভাবে অনেক সময় মাছ নষ্ট হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে তখন কম দামে আমাদের আহরিত মাছ বিক্রি করে দিতে হয়। মৎস্য ব্যবসায়ী আ. বারেক প্যাদা বলেন, ওই কলটি বন্ধ হওয়ার পরে আমতলীতে আর কোনো বরফকল স্থাপিত না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে আমাদের মতো মৎস্য ব্যবসায়ীদের। আমাদের দূর-দূরান্ত থেকে বরফ সংগ্রহ করে মৎস্য প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত করেতে হচ্ছে। তিনি দ্রুত বেদখল হওয়া বরফকলের সম্পত্তি উদ্ধার করে কলটি পুনঃরায় চালু করার জোর দাবি জানান। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন বরফকলটি চালু ও কোটি টাকা মূল্যের জমি উদ্ধারের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র দিয়ে জানানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, উপকূলীয় এলাকায় জেলেদের সংখ্যা যেমন বেশি তেমনি জেলেদের আহরিত মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্যও পর্যাপ্ত বরফ প্রয়োজন। এছাড়া এ এলাকায় ছোট বড় বেশ কয়েকটি মৎস্য বন্দর রয়েছে। এসব সকল বিষয় বিবেচনা করে বরফকল স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। এজন্য দ্রুত বরফকল স্থাপন ও বেদখল হওয়া জমি দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply